খুদ্দকনিকায়ে থেরীগাথা
অনুবাদক:
ভিক্ষু শীলভদ্র
১. একক নিপাত
১. অজ্ঞাতনামা থেরী
১. বৎসে, সুখনিদ্রায় নিদ্রিত হও, স্বহস্তনির্মিত চীবরাচ্ছাদিত দেহে
স্বচ্ছন্দে বিরাম লাভ কর। চুল্লীর উপরিস্থিত শুষ্ক নীরস উদ্ভিদের ন্যায় অভ্যন্তর আলোড়নকারী
রাগসমূহ নিষ্ক্রিয় হইয়াছে।
২. মুক্তা (মুত্তা) থেরী
২. মুক্তে, মুক্ত হও, রাহুর গ্রাসমুক্ত চন্দ্রের ন্যায় মুক্ত হও। বিমুক্ত
চিত্তে অনৃণী হইয়া স্বীয় প্রাপ্য গ্রহণ কর।
৩. পূর্ণা (পুণ্ণা) থেরী
৩. পূর্ণে, পঞ্চদশ দিবসের পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় পবিত্র জীবনের পূর্ণতা
সাধন করো। পূর্ণপ্রজ্ঞা দ্বারা অবিদ্যার অন্ধকারকে দূরীভূত করো।
৪. তিষ্যা (তিস্সা) থেরী
৪. তিষ্যে, ত্রিবিধ শিক্ষায় শিক্ষিতা হও। বর্তমান মহৎ যোগ যেন বৃথা
চলিয়া না যায়! সর্ববিধ শৃঙ্খল ছিন্ন করিয়া আসবমুক্ত হইয়া লোকে বিচরণ করো।
৫. তিষ্যা নামধারী অপর একজন থেরী
৫. তিষ্যে, উচ্চতম মানসিক উন্নতির অনুশীলনে যত্নবতী হও। দেখো, সময়
উপস্থিত। ইহা যেন বৃথা না যায়! যাহারা শুভ মুহূর্তের সুযোগ গ্রহণে অক্ষম
হয়, তাহারা নরকে পতিত হইয়া অনুতপ্ত হয়।
৬. ধীরা থেরী
৬. ধীরে, চিত্তবৃত্তির নিরোধে উপনীত হও, সংজ্ঞার উপশম সুখময়। যাহা সর্বশ্রেষ্ঠ
সেই বন্ধন-মুক্তিরূপ শান্তির উৎস নির্বাণের আরাধনা করো।
৭. ধীরা নাম্নী অপর থেরী
৭. দ্যুতিমান আর্যমার্গধর্ম দ্বারা ভাবিতেন্দ্রিয়া ভিক্ষুণী ধীরা, সবাহন
মারকে পরাজিত করিয়া তুমি অন্তিম দেহ ধারণ করো।
৮. মিত্রা (মিত্তা) থেরী
৮. মিত্রে, তুমি শ্রদ্ধাভরে গৃহত্যাগ করিয়াছ, যাহারা তোমার মৈত্রীর
যোগ্য, মনে ও বাক্যে তাহাদের প্রতি মৈত্রীভাবাপন্ন হও। সর্বোত্তম শান্তিপ্রদায়ী মঙ্গলাচরণে
ব্রতী হও।
৯. ভদ্রা থেরী
৯. ভদ্রে, তুমি শ্রদ্ধাভরে প্রব্রজ্যা লইয়াছ, যাহা পরম আনন্দ, সর্বান্তকরণে
তাহাতে নিয়োজিত হও। মঙ্গলের অনুশীলনপূর্বক অত্যুৎকৃষ্ট শান্তির দিকে অগ্রসর হও।
১০. উপশমা থেরী
১০. উপশমে, মৃত্যুর রাজ্য দুস্তর মরণ সিন্ধু অতিক্রম করো, তোমার সর্বশেষ
মূর্তি এই লক্ষ্যে বদ্ধ করো, তুমি মার ও তদীয় অনুচরবর্গকে পরাজিত করিয়াছ।
১১. মুক্তা (মুত্তা) থেরী
১১. সত্যই আমি মুক্ত। ত্রিবিধ বক্র পদার্থ হইতে উদূখল, মুষল ও কুঁজোদেহ
স্বামী হইতে আমার মুক্তি গৌরবময়। কিন্তু তদপেক্ষাও শ্রেষ্ঠতর মুক্তি, তৃষ্ণার উন্মুলনে
আমি জাতি ও মরণের গ্রাস হইতে মুক্ত।
১২. ধর্মদিন্না থেরী
১২. যিনি সর্বান্তকরণে চিরবিশ্রামের বাসনা করেন, ভোগতৃষ্ণার আকর্ষণে
যিনি প্রলুব্ধ হন না, তিনি ‘উদ্ধংসোতা’ কথিত হন।
১৩. বিশাখা থেরী
১৩. বুদ্ধশাসনের অনুগামী হও। ইহাতে অনুতপ্ত হইবার কারণ কখনোই ঘটিবে
না। সত্বরে পদাদি ধৌত করিয়া নির্জনে একাকী উপদিষ্ট হও।
১৪. সুমনা থেরী
১৪. জীবনের প্রত্যেক উৎসে দুঃখ ও অমঙ্গলের অস্তিত্ব দেখিয়া পুনরায় জন্ম
পরিগ্রহ করিও না। জন্মের প্রতি অত্যাসক্তি পরিহারপূর্বক শান্ত ও নির্মল চিত্তে বিচরণ
করো।
১৫. উত্তরা থেরী
১৫. কায়, মন ও বাক্য সংযত করিয়া, তৃষ্ণা ও তৃষ্ণার মূল বিনষ্ট করিয়া,
আমি এখন শান্ত; নির্বাণের শান্তি আমার জ্ঞাত।
১৬. সুমনা থেরী
১৬. বৃদ্ধা, তুমি সুখে বিশ্রাম করো! স্বকৃত চীবরাচ্ছাদিত হইয়া বিরাম
লাভ করো। অভ্যন্তর আলোড়নকারী রাগাদি নিষ্ক্রিয় হইয়াছে। তুমি এখন শান্ত, নির্বাণের শান্তি
তোমার জ্ঞাত।
১৭. ধম্মা থেরী
১৭. দৈনন্দিন খাদ্যের জন্য বহুদূর ভ্রমণ করিয়া ক্লান্ত কম্পিত দেহে
যষ্টির সহায়তায় আবাসে উপনীত হইলাম, কিন্তু সেখানে ভূতলে পতিত হইলাম। পতনমাত্র এই অকিঞ্চিৎকর
নশ্বর দেহের সর্বপ্রকার অশুভ অন্তর্দৃষ্টির সম্মুখে নগ্নরূপে প্রকাশিত হইল। দেহ ভূতলশায়ী;
কিন্তু আমার বিমুক্ত চিত্ত ঊর্ধ্বগামী হইল।
১৮. সঙ্ঘা থেরী
১৮. আমি সংসার ও গৃহ পরিত্যাগ করিয়াছি, সন্তান ত্যাগ করিয়াছি, প্রিয়
পশুপাল ত্যাগ করিয়াছি! আমি রাগ, দ্বেষ ও অবিদ্যা দূর করিয়াছি; তৃষ্ণা ও তৃষ্ণার মূল
উৎপাটিত করিয়া আমি এক্ষণে শান্ত, নির্বাণের শান্তি আমার জ্ঞাত।