ধর্মপদ, খুদ্দকনিকায়ে
অনুবাদক : শ্রীমৎ ধর্মাধার মহাস্থবির
১. যমক বর্গ
১. মন ধর্মসমূহের পূর্বগামী, মন ইহাদের প্রধান এবং ইহারা মনোময় বা মনের দ্বারা গঠিত। যদি কেহ দোষযুক্ত মনে কোনো কথা বলে কিংবা কাজ করে, তবে শকটবাহীর [বলদের] পদানুগামী চক্রের ন্যায় দুঃখ তাহার অনুসরণ করে।
২. মন ধর্মসমূহের অগ্রণী, মন ইহাদের প্রধান এবং ইহারা মনের দ্বারা গঠিত। যদি কেহ প্রসন্ন মনেকোনো কথা বলে কিংবা কাজ করে, তবে অবিচ্ছিন্ন ছায়ার ন্যায় সুখ তাহার অনুগামী হয়।
৩. আমাকে আক্রোশ করিল, আমাকে প্রহার করিল, আমাকে জয় করিল কিংবা আমার [সম্পত্তি] হরণ করিল, যাহারা এইরূপ চিন্তা পোষণ করে তাহাদের শত্রুতার উপশম হয় না।
৪. আমাকে আক্রোশ করিল, আমাকে প্রহার করিল, আমাকে জয় করিল কিংবা আমার (সম্পত্তি) হরণ করিল, যাহারা এই রূপচিন্তা পোষন না করে তাঁহাদের শুত্রুতাঁর উপশম হয়।
৫. জগতের শত্রুতার দ্বারা কখনো শত্রুতার উপশম হয় না, মিত্রতার দ্বারাই শত্রুতার উপশম হয়; ইহাই সনাতন ধর্ম।
৬. আমরা এখানে [কলহে] নষ্ট হইতেছি অর্থাৎ অনুক্ষণ মৃত্যুর দিকে যাইতেছি, (কলহপ্রিয়) লোকেরা ইহা বুঝে না; যাহারা ইহা উপলব্ধি করে তাহাদের কলহ প্রশমিত হয়।
৭. যে [দেহের বাহ্য] শোভাদর্শী, ইন্দ্রিয়সমূহে অসংযত, ভোজনে মাত্রাজ্ঞানহীন, আলস্যপরায়ণ ও হীনবীর্য, বায়ুবিধ্বস্ত দুর্বল বৃক্ষের ন্যায় মার [রিপুগণ] তাহাকেই অভিভূত করে।
৮. যিনি [বাহ্য] শোভা দর্শনে বিরত [অশুভ ভাবনায় রত], ইন্দ্রিয়সমূহে সুসংযত, ভোজনে মাত্রা রাখেন, শ্রদ্ধাবান ও আরব্ধবীর্য, বায়ুতে অবিচলিত শিলাময় পর্বতের ন্যায় মার তাঁহাকে কখনো অভিভূত করিতে পারে না।
৯. যে কামরাগাদি কলুষযুক্ত হইয়া গৈরিক বস্ত্র পরিধান করে, অথচ সত্য ও দমগুণ-বিহীন, সে প্রকৃতপক্ষে গৈরিক বসনের অনুপযুক্ত।
১০. যিনি কলুষমুক্ত, শীলে সুপ্রতিষ্ঠিত, সংযতেন্দ্রিয় ও সত্যপরায়ণ, তিনিই গৈরিক বসন ধারণের যোগ্য। ১১. যাহারা অসারকে সার এবং সারবস্তুকে অসার মনে করে, সেই মিথ্যা কল্পনাবিলাসীরা প্রকৃত সারবস্তু লাভ করিতে পারে না।
১২. যাঁহারা সারবস্তুকে সার এবং অসারবস্তুকে অসাররূপে জানেন, সেই সম্যক সংকল্পগোচর ব্যক্তিরা প্রকৃত সারবস্তু লাভ করিতে সমর্থ হয়।
১৩. দুরাচ্ছাদিত গৃহে যেমন বৃষ্টি প্রবেশ করে, তেমনি সাধনাবিহীন চিত্তে কামরাগ প্রবেশ করে।
১৪. সু-আচ্ছাদিত গৃহে যেমন বৃষ্টি প্রবেশ করে না, তেমনি সাধনাপূত চিত্তে বিষয়-বাসনা প্রবেশ করে না।
১৫. পাপকারী ইহলোক-পরলোক উভয়লোকে অনুশোচনা করে, সে স্বীয় মন্দকর্ম দেখিয়া অনুতপ্ত ও মর্মাহত হয়।
১৬. কৃতপুণ্য ব্যক্তি ইহলোক-পরলোক উভয়লোকেই আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। স্বীয় কর্মশুদ্ধি দর্শন করিয়া তিনি আনন্দ ও পরমানন্দ লাভ করেন।
১৭. পাপী ইহলোক ও পরলোক উভয়লোকেই মনস্তাপ ভোগ করে। আমার দ্বারা পাপকর্ম করা হইয়াছে, এই ভাবিয়া সে অনুতপ্ত হয় এবং দুর্গতি প্রাপ্ত হইয়া অধিকতর সন্তপ্ত হয়।
১৮. কৃতপুণ্য ব্যক্তি ইহলোক ও পরলোক উভয়ত্রই আনন্দিত হন। আমার দ্বারা পুণ্য করা হইয়াছে, ইহা স্মরণ করিয়া তিনি আনন্দিত হন এবং সুগতি প্রাপ্ত হইয়া তিনি পরমানন্দ লাভ করেন।
১৯. রাখাল যেমন পরের গাভী গণনা করিয়াই গোরসের অধিকারী হয় না, সেইরূপ যে প্রমত্ত ব্যক্তি বহু সাহিত্য (ধর্মগ্রন্থ) আবৃত্তি করে অথচ স্বয়ং তদনুরূপ আচরণ করে না সেও তেমনি শ্রামণ্যের অধিকারী হয় না।
২০. যিনি অল্প মাত্রই ধর্মগ্রন্থ আবৃত্তি করিয়া ধর্মানু কূল জীবন গঠন
করেন এবং কী রাগ, দ্বেষ ও মোহ পরিহার পূর্বক প্রজ্ঞাবান ও বিমুক্ত চিত্ত হইয়া ঐহিক
পারত্রিক কিছুতেই অকৃষ্ট হন না, তিনিই প্রকৃত শ্রামণ্যের অধিকারী হন।
যমগ বর্গ সমাপ্ত