ভালো? মন্দ? কে জানে?


ভালো? মন্দ? কে জানে?

মূল লেখক : আজান ব্রহ্ম

অনুবাদক : সুব্রত বড়ুয়া

১. আধার ও আধেয়জ্ঞান

একবার স্থানীয় একজন সাংবাদিক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আজান ব্রহ্ম, কেউ যদি বৌদ্ধধর্মের একটি পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে আপনার টয়লেটে ফেলে ফ্লাশ করেন, তাহলে আপনি কি করবেন? বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে আমি জবাব দিয়েছিলাম, স্যার, কেউ যদি বৌদ্ধধর্মের  একটি পবিত্র বই নিয়ে আমার টয়লেটে ফেলে ফ্লাশ করেন, তাহলে প্রথমে যে কাজটি আমি করব তা হলো, একজন প্লাম্বার মিস্ত্রিকে ডেকে আনব! সাংবাদিক তাঁর হাসি থামানোর পর চুপিসারে আমাকে বলেছিলেন যে, এই প্রথমবারের মতো তিনি একটি যুক্তিযুক্ত জবাব পেলেন। এরপর তাঁকে আমি আরও কিছু বললাম। আমি ব্যাখ্যা করে বললাম যে, কেউ বুদ্ধের অনেক মূর্তি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে, বৌদ্ধমন্দির পুড়িয়ে দিতে পারে অথবা বৌদ্ধ ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীদের হত্যা করতে পারে; তারা এগুলো ধ্বংস করতে পারবে, কিন্তু আমি কিছুতেই তাদের বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করতে দেব  না। আপনি একটি ধর্মগ্রন্থ টয়লেটে ফেলে ফ্লাশ করতে পারেন, কিন্তু আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা, শান্তি ও সহানুভূতি টয়লেটে ফ্লাশ করতে দেব না। ধর্মগ্রন্থ ধর্ম নয়, মূর্তিও ধর্ম নয়, ইমারত বা ধর্মযাজকও ধর্ম নয়। এগুলো আধার মাত্র। বই আমাদের কী শিক্ষা দেয়?  মূর্তি আমাদের কাছে কিসের প্রতীক? ধর্মযাজকদের কোন কোন গুণ থাকা উচিত? এগুলোই হচ্ছে আধেয় আমরা যখন আধার এবং আধেয়র মধ্যেকার পার্থক্য চিহ্নিত করতে পারব, তখনই আমরা আধেয় সংরক্ষণ করতে পারব, এমনকি আধার যদি ধ্বংসও করে ফেলা হতে থাকে। আমরা আরও বেশি বই ছাপাতে পারি, আরও অনেক মন্দির ও মূর্তি তৈরি করতে পারি, এবং এমনকি আরও অনেক ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারব। কিন্তু যখন আমরা অন্যদের প্রতি ও আমাদের নিজেদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলব এবং তার বদলে আমাদের মনে হিংসা ও বিদ্বেষের ভাব পোষণ করতে থাকব, তখন সমস্ত ধর্মটাই  টয়লেটের ভেতর তলিয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন