মৃত্যুবরণ ও পুনর্জন্ম
মূল লেখক:
অগ্গচিত্ত ভিক্ষু
অনুবাদ:
জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু
সূচনা
পুনর্জন্ম অনিশ্চিত
কোনো একজন কীভাবে মারা যায় তা-ই তার ভবিষ্যৎ নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। আমরা বলতে পারি যে সাধারণত কোনো একজন কীভাবে মারা যায়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে কীভাবে জীবন কাটিয়েছে তার উপরই নির্ভর করে। তা সত্ত্বেও একজন সাধারণ লোক, যে একটি ধার্মিক ও সুশীল জীবন যাপনের চেষ্টা করেছে, সে সুগতি ভূমিতে পুনর্জন্ম লাভ করবে অথবা কোনো খুনী দুর্গতি ভূমিতে পুনর্জন্ম লাভ করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ধর্মনিষ্ঠ সম্রাট অশোক বুদ্ধধর্মের জন্য যা করেছিলেন তা ইতিহাসে নজিরবিহীন, কিন্তু মৃত্যুর পরে তার জন্ম হলো সাপ হিসেবে। কাশ্যপ বুদ্ধের আমলে এক ভিক্ষু প্রায় ২০,০০০ বছর যাবত জঙ্গলে একাকী ধ্যান করেছিল। তার এত সুদীর্ঘ সাধনা সত্ত্বেও সে নির্বাণ লাভ করতে পারে নি, সে পুনর্জন্ম লাভ করেছিল এরকপত্ত নাগ নামে এক ড্রাগন হিসেবে আর বেঁচেছিল সুদীর্ঘকাল ধরে। একজন জল্লাদ পঞ্চান্ন বছর ধরে জল্লাদগিরি করে অবসর নেওয়ার দিনে সারিপুত্র ভন্তেকে পিণ্ডদান দিয়ে এবং তার কাছ থেকে ধর্মদেশনা শুনে এর পরপরই ঘটনাক্রমে নিহত হলো। তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বুদ্ধ বললেন যে, সে তুষিত স্বর্গে জন্ম নিয়েছে।
উপরোক্ত উদাহরণগুলো থেকে আপনি দেখবেন যে মৃত্যু এবং পুনর্জন্মে কর্মের ভূমিকা এমন অচিন্ত্যনীয় যে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলার চাইতে সম্ভাবনা হিসেবে বলাই উপযুক্ত। আমরা বলতে পারি যে সাধারণ একজন লোক, যে একটি ধার্মিক ও সুশীল জীবন যাপনের জন্য চেষ্টা করেছে, তার সুগতি ভূমিতে পুনর্জন্ম লাভের সম্ভাবনায় বেশি, কিন্তু সে যে এখনো দুর্গতির ভূমিতে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে, তার সম্ভাবনাটাও আমরা উড়িয়ে দিতে পারি না। একই ভাবে আমরা বলতে পারি যে কোনো এক ডাকাতের দুর্গতি ভূমিতে পুনর্জন্ম লাভের সম্ভাবনা খুব বেশি, কিন্তু তার দেবলোকে জন্মলাভের সম্ভাবনাটাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ক্রমিক অনিশ্চয়তা
এমন অনিশ্চয়তার কারণ হচ্ছে, জীবনের চলার পথে একজন যত কর্ম সম্পাদন করে
তা আসলেই বৈচিত্র্যময়। কিন্তু সেগুলো আপাতদৃষ্টিতে খুব বৈচিত্র্যময় বলে মনে হলেও এবং
স্বভাবতই সেগুলো অনিশ্চিত বলে মনে হলেও একটি গভীর ও সূক্ষ্ম নিয়ম কিন্তু ঠিকই কাজ করে
চলে, যে নিয়ম অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির কর্ম পরিপক্ব হয়ে পুনর্জন্ম প্রদান করে।
মৃত্যুর আগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্তক্ষণই পরবর্তী জীবনের স্বর্গীয় সুখ, মানব জীবনের
আনন্দ-বেদনা অথবা দুর্গতির দুঃখকে নিয়তি হিসেবে নির্ধারণ করে দেয়। যে ব্যক্তি কর্মের
এই নিয়মটাতে বিশ্বাস করে, তার কাছে এই সূক্ষ্ম কিন্তু সুগভীর নিয়মের পরিষ্কার অর্থ
বুঝতে পারাটা খুবই অমূল্য। সে তখন পরিস্থিতি অনুসারে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়তিকে কিছুটা
নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো ভালো অবস্থানে থাকবে আর মরণাপন্ন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের
সুগতি ভূমিতে পুনর্জন্ম লাভের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়ে তাদেরকে চমৎকারভাবে সাহায্য
করতে পারবে।